1. [email protected] : বাংলারকন্ঠ : বাংলারকন্ঠ
  2. [email protected] : বাংলারকন্ঠ.কম : বাংলারকন্ঠ.কম
  3. [email protected] : nayan : nayan
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৯:২০ পূর্বাহ্ন

কোম্পানির যোগসাজসে নাভানা ফার্মার শেয়ার নিয়ে কারসাজি!

  • আপডেট সময় : বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০২২
  • ৭৫ বার দেখা হয়েছে

শেয়ারবাজারে সদ্য তালিকাভুক্ত ফার্মা ও রসায়ন খাতের কোম্পানি নাভানা ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে বলে বাজারে আওয়াজ রয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। অভিযোগ রয়েছে, চক্রটিকে কারসাজিতে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে কোম্পানিটির কিছু কর্তাব্যক্তি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু কিছু কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আঁতাত করে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বছরজুড়ে কারসাজি করে আসছে শেয়ারবাজারে কয়েকটি কারসাজি চক্র। যারা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পর্দার আড়ালে সুসম্পর্ক রাখার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গেও দহরম-মহরম বজায় রাখে। যে কারণে তারা সব সময় থাকে পর্দার আড়ালে। ছোট-খাটো কিছু নামসর্বস্ব বিনিয়োগকারীর লোক দেখানো শাস্তি বা জরিমানা হলেও কারসাজির আসল হোতারা সব সময় থেকে যান পর্দার আড়ালেই।

নাভানা ফার্মার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোম্পানিটির শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ২৪ টাকায়। লেনদেনের প্রথম ৮ দিনে কোম্পানিটির শেয়ারদর ২৪ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ টাকায়। এই সময়ে শেয়ারটির দর বাড়ে ২৭ টাকা বা ১১২ শতাংশের বেশি। এরপর ৯ম দিনে আসে ডিভিডেন্ডের ঘোষণা। সেদিন সার্কিট ব্রেকার না থাকার কারণে শেয়ারটির দর ৫১ টাকা থেকে ৯১ টাকায় উঠে যায়। একদিনেই বেড়ে যায় ৪০ টাকা বা ৭৮ শতাংশের বেশি।

চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসও শেয়ারটির দর বেড়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (০৮ নভেম্বর) দর উঠেছিল ১৩২ টাকায়। দিনশেষে ক্লোজিং হয়েছে ১২১ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ ১৩২ টাকায় তোলে ধীরে ধীরে শেয়ার সেল করেছে কারসাজিকারিরা। যে কারণে ১৩২ টাকা উঠে নেমে যায় ১২২ টাকার নিচে।

শেয়ারবাজারে আসার পর ২০ কাযদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ৪০৭.৫০ শতাংশ। গত দুই সপ্তাহ যাবত কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন ও দরের দিক থেকে শীর্ষ তালিকায় স্থান দখল করে নিয়েছে। কারসাজি ছাড়া এভাবে কোন শেয়ারের লেনদেন ও দর বৃদ্ধি কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত উত্তর আসছে। কোম্পানিটির সচিব জয়নুল আবেদিন শেয়ারনিউজ২৪.কমকে বলেন, নাভানা গ্রুপের আরও কয়েকটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এতে করে নাভানা ফার্মার বোর্ড ভালোভাবেই জানে কিভাবে আইন মেনে শেয়ারবাজারে চলতে হয়।

তিনি বলেন, নাভানা ফার্মার মালিকপক্ষ শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত এমন তথ্য আমাদের কাছেও এসেছে। যে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কারণ আমাদের কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই এমন কাজের সঙ্গে জড়িত নেই বা এই সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্যও নেই।

কোম্পানিটির শেয়ার গত ১৮ অক্টোবর থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে। ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ওষুধ কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। সারাদেশে মানবদেহের ৪৮৬টি ও ভেটেরিনারি ৪৮টি পণ্য বাজারজাত করা এই কোম্পানিটির সেফেলোস্পেরিন ইউনিটের সংস্কার, উৎপাদন ভবন নিমার্ণ, নতুন ইউটিলিটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং নিমার্ণের জন্য শেয়ারবাজার থেকে এই টাকা সংগ্রহ করেছে।

১৯৮৬ সালে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নিজস্ব জমিতে ওষুধ উৎপাদনের শুরু করে। ১৯৮৮ সালে সাধারণ উৎপাদন ইউনিট চালু করে কোম্পানিটি। ২০০৩ সালে ভেটেরিনারি প্রোডাকশন ইউনিটের উৎপাদন শুরু হয়। ২০০৯ সালে সেফালোস্পোরিন ইউনিট শুরু করা হয়, যা একটি উচ্চমানের সেফালোস্পেরিন সুবিধা নিশ্চিত করে এবং ২০১২ সালে শুরু করা হয় এসভপিও ইউনিট। আর ২০১৩ সালে পেনিসিলিন ইউনিটের নতুন সুবিধা শুরু করা হয়।

শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর ৮ কার্যদিবস পর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৪২ পয়সা। যা আগের অর্থবছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৫২ পয়সা।

আগামী ১৩ নভেম্বর কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২২) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। বাজারে গুঞ্জন রয়েছে, কারসাজিকারিরা যাতে আকাশচুম্বী দরে শেয়ারটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাঁধে চাপাতে পারে, সেজন্য কোম্পানিটি হয়তো নজরকাড়া মুনাফা ঘোষণা করবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারের বহু কোম্পানি অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন তাদের সুবিধা মতো ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে-কমিয়ে প্রকাশ করে। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের গায়েল করার জন্য অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে তারা। কোম্পানিটির শেয়ারদর দেখে মনে হচ্ছে, নাভানা ফার্মাও সেই পথেই হয়তো হাঁটতে পারে-এমন অভিযোগ করছেন তাঁরা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেয়ারদর বাড়ার পাশাপাশি গত সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের মোটা অঙ্কের লেনদেনও হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১২ কোটি ১৪ লাখ ২ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যে কারণে কোম্পানিটির শেয়ার সাপ্তাহিক শীর্ষ লেনদেন তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল এবং দর বৃ্দ্ধির শীর্ষ তালিকায় ১১৫ শতাংশ দর বৃদ্ধি নিয়ে শীর্ষ স্থানে উঠেছিল।

চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসও কোম্পানিটি লেনদেন ও দর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সমানতালে দাপট বজায় রেখেছে। এই তিন কার্যদিবসের মধ্যে রোববার কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে প্রায় ৪৬ লাখ ১৮ হাজার শেয়ার, যার বাজার মূল্য ছিল আনুমানিক ৫০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা; সোমবার ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৪২ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং মঙ্গলবার প্রায় ৪৮ লাখ, যার বাজার মূল্য ছিল আনুমানিক ৪৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

সাধারণ বিনিয়োকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ারদর ও লেনদেন অবস্থা পর্যালোচনা করলে শেয়ারটি নিয়ে যে কারসাজি হচ্ছে তা দিনের মতো পরিস্কার হয়ে যায়। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশই থাকে না। কিন্তু তারপরও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের চোখে শেয়ারটির কারসাজি ধরা পড়ছে না। যে কারণে যতই দিন যাচ্ছে, ততই প্রতিষ্ঠানটির নিরপেক্ষতা ও স্বচ্চতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা ভরসা ও আস্থার প্রধান জায়গা হলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। শেয়ারবাজারে স্বার্থে প্রষ্ঠানটিগুলোর উজ্জ্বল ভাবমূর্তি বজার রাখা অত্যাবশ্যক। তাঁরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা ও ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল রাখার স্বার্থে এবং শেয়ারবাজারে বৃহত্তর স্বার্থে কারসাজিকারিদের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের শক্ত অবস্থান অবশ্যই দরকার।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ