1. [email protected] : বাংলারকন্ঠ : বাংলারকন্ঠ
  2. [email protected] : বাংলারকন্ঠ.কম : বাংলারকন্ঠ.কম
  3. [email protected] : nayan : nayan
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৪:০৭ অপরাহ্ন

নেত্রকোণায় ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে বোমাসহ ৮০ ধরনের সরঞ্জাম জব্দ

  • আপডেট সময় : সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪
  • ৩০ বার দেখা হয়েছে

নেত্রকোণা সংবাদদাতা : নেত্রকোণায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটিতে রোববার (৯ জুন) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়েছে অ্যান্টি টেররিজম, সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের বিশেষজ্ঞ দল। তারা সেখান থেকে বোমা এবং জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করেছে। ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন এ তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

এদিকে, তল্লাশি অভিযান শেষে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা আশপাশের বাড়ির লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে ছয়টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বোমা (আইইডি) নিষ্ক্রিয় করে। এসময় বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা।

ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুল্লাহ চৌধুরী, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের বোমা বিশেষজ্ঞ পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন এবং নেত্রকোণার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদের নেতৃত্বে দিনব্যাপী বাড়িটিতে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় সেখান থেকে মোট ৮০ ধরনের সরঞ্জাম জব্দ হয় ।

জব্দ হওয়া সরঞ্জামের মধ্যে ছিল- ছয়টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা (আইইডি), একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি নানচাকু ও ৬ প্যাকেট সিসিটিভি ক্যামেরা, একটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি, দুুট মার্শাল আর্ট ড্রেস, দুটি ফ্ল্যাশ লাইট, পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, সাতটি বাটন ফোন, দুটি হাই পাওয়ার দূরবীন, সিলিকনের তৈরি মানবাকৃতির একটি পাঞ্চিং বক্স, পাঞ্চিং ব্যাগ, প্লাস্টিকের ২০টি ডামি রাইফেল, একটি রাম দা, একটি পাসপোর্ট, দুটি অত্যাধুনিক কম্পাস, একটি ইলেকট্রিক করাত, ৩০টি বেল্ট প্রভৃতি।

ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আব্দুল মান্নানের এই বাড়িটিতে হামিম হোসেন ফাহিম ওরফে আরিফ নামের এক যুবকসহ কয়েকজন ভাড়া থাকতেন। আরিফ গত ৫ জুন নরসিংদীর রায়পুরায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। আরিফের বর্তমান ঠিকানা হিসেবে এই বাড়িটির কথা উল্লেখ করেন। এরই সূত্র ধরে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আব্দুল মান্নানের সঙ্গে গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত পুলিশের যোগাযোগ ছিল। তিনি সদর মডেল থানার ওসির সঙ্গে কয়েকবার কথাও বলেছেন। আজ (রোববার) তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ফোনটি বন্ধ রয়েছে। এই জঙ্গি আস্তানার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কী না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত এর বাইরে আমরা আর কিছু বলতে পারছি না।’

নরসিংদীর রায়পুরা থানায় দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া হামিম হোসেন ফাহিম ওরফে আরিফের (৩২) বাড়ি পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার উত্তর বালিহাড়ি (মাঝিবাড়ি) গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে।

গতকাল শনিবার দুপুরে প্রথমে নেত্রকোণা মডেল থানা পুলিশ ভাষাপাড়া গ্রামে উঁচু দেয়ালে পরিবেষ্টিত ও অত্যন্ত সুরক্ষিত দোতলা বাড়িটিতে অভিযান শুরু করে। সন্ধ্যা নাগাদ সেখান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১৭টি গুলি, দুটি ওয়াকিটকি, একটি হ্যান্ডকাফ ও এক বস্তা জিহাদি বই জব্দ করে পুলিশ। এরপর অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা এসে নিশ্চিত হয় যে, বাড়িটিতে বিস্ফোরক দ্রব্য রয়েছে। তারা অভিযান স্থগিত রেখে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও সোয়াট টিমকে খবর পাঠায়। রোববার সকালে দুটি টিমের সদস্যরা এসে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে।

অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, বাড়িটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এ বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। এখানে যে ধরনের ডিভাইস পাওয়া গেছে, তার সঙ্গে ২০১৭ সালে মোহাম্মদপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় উদ্ধার করা সরঞ্জামের মিল রয়েছে।’

জেলা পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘বাড়িটির ভেতরের একটি কক্ষ সাউন্ডপ্রুফ (শব্দ নিরোধক) করা ছিল। একটি ব্যায়ামাগারও রয়েছে। এমনকি কারাতে বা মার্শাল আর্টের সরঞ্জামও পাওয়া গেছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় মনে হয়েছে, এটি ১৫-২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।’

স্থানীয়রা জানান, ভাষাপাড়া গ্রামের নির্জন স্থানে প্রায় আড়াই একর জমির ওপর ২০ বছর আগে নির্মাণ করা হয় বাড়িটি। বাড়িটির মালিক আটপাড়া উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের মৃত ফারুক আহমেদের ছেলে আবদুল মান্নান। তিনি ওই বাড়িতে একটি মহিলা কলেজ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর করেননি। দুই বছর আগে বাড়িটি তিনি আরিফ নামের ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেন। বাড়ির ভেতরে থাকা দুটি বড় পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। এ ছাড়া, প্রাচীরের ভেতরে একটি আধা পাকা টিনের ছাউনি ঘর আছে। ভাড়া দেওয়ার পর ভাড়াটিয়ারা বাড়ির সীমানাপ্রাচীর আগের চেয়ে আরও দেড় ফুট উঁচু করেন। এর ফলে বাড়ির কিছুই বাইরে থেকে দেখা যায় না। বাড়িটির নারকেল গাছ, আমগাছ সীমানাপ্রাচীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। ওই বাড়িতে স্থানীয় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হত না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, বাড়িটিতে দুজন পুরুষ, দুজন নারী ও চার-পাঁচটি বাচ্চা থাকতো। গভীর রাতে একটি জিপ গাড়িতে আরও কয়েকজন যাতায়াত করত। তারা খুবই গোপনীয়তা রক্ষা করত। স্থানীয় কারও সঙ্গে মিশতো না। এমনকি বাড়িটির ভেতরে বা সীমানার বাইরে কাউকে আসতে দিত না। বাড়িটি দেখে আমাদের অনেক আগে থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল।

নেত্রকোণা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ