1. [email protected] : বাংলারকন্ঠ : বাংলারকন্ঠ
  2. [email protected] : বাংলারকন্ঠ.কম : বাংলারকন্ঠ.কম
  3. [email protected] : nayan : nayan
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে ‘স্যালাইন দেওয়ার পর’ চার নারীর মৃত্যু

  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২১ বার দেখা হয়েছে

রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীতে স্যালাইন দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে চার নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সিজারিয়ান অপারেশনের আগে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের এ স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।

স্যালাইন দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়া আরও দুই নারী এখনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রয়েছেন। এদিকে, মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে মারা যাওয়া নারীদের মধ্যে দু-একজনের স্বজনদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘ম্যানেজ’ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই স্যালাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, গঠিত হয়েছে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি। কিন্তু বিষয়টি জেলার সিভিল সার্জন কিংবা স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে জানানো হয়নি।

হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি সিজারিয়ান অপারেশনের আগে ‘আইভি স্যালাইন’ দেওয়ার পর ছয় নারীর একই রকমের শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। অপারেশনের পরে ধীরে ধীরে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। কমে যায় কিডনির কার্যক্ষমতা, হার্টে দেখা দেয় ব্লক। এতে চার নারীর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে দুইজন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে সূত্রটি মৃত নারীদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. সানাউল হক মিয়াকে একাধিকবার কল দেন এ প্রতিবেদক। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে হাসপাতালের ইনচার্জ ইলিয়াস হোসেনকে তার কক্ষে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে কমিটি হয়েছে। তারা কাজ করছেন।’

মৃত নারীদের নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমি ওয়াশরুমে আছি। বের হয়ে কথা বলব।’ পরে অসংখ্যবার কল দিলও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত নারীদের তথ্য না দিলেও খোঁজ নিয়ে দুজনের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাদের একজন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আনুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আসমা খাতুন (৩৮)।

তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার রাজশাহীর পবা উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। আসমার স্বামী আফজাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অপরজন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার। তবে ওই নারীর স্বামী তার কিংবা স্ত্রীর নাম-পরিচয় সংবাদে প্রকাশের অনুমতি দেননি। তিনি বলেছেন, ‘ভাগ্যে মৃত্যু ছিল, হয়ে গেছে। এসব বলে আর লাভ নেই।’

আসমা খাতুনের স্বামী আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রী প্রথমবার গর্ভধারণ করেছিল। প্রায় এক বছর সে নিয়মিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. সুলতানা নাজনীন রিতার কাছে চেকআপ করিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সন্তান প্রসবের সময় হলে গত ১৯ মার্চ আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেসময় তাকে একটি স্যালাইন দেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে আমার স্ত্রী সন্তানের জন্ম দেয়। এরপরই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।’

আফজাল হোসেন বলেন, ‘রাত ৪টার দিকে চিকিৎসকেরা জানান, আসমার দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে পড়েছে। এছাড়া, হার্টের কার্যক্ষমতাও কমে গেছে।’

‘চিকিৎসকদের তখন প্রশ্ন করি, গর্ভধারণের পুরোটা সময়ই আসমা চেকআপ করিয়েছে। তখন কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। হঠাৎ এখন এত সমস্যা কেন? উত্তরে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এটা স্যালাইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।’ – যোগ করেন তিনি।

আফজাল হোসেন বলেন, ‘ওই রাতেই ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব লোক ও অ্যাম্বুলেন্সে আসমাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ১৫ মিনিট পরই আসমা মারা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসমার মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে মোটা টাকার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমি সেটা গ্রহণ করিনি। এ ঘটনায় মামলা করব।’

এসব বিষয়ে জানতে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুলতানা নাজনীন রিতার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ঘটনা তদন্তে গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘স্যালাইন দেওয়ার পর কয়েকটা রোগীর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। আমরা শুধু আসমা খাতুনের ব্যাপারটা নিয়ে তদন্ত করছি। ওই স্যালাইন আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মো. ফারুক বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে ঘটনাটা শুনলাম, সেটাও অন্য মাধ্যমে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছু জানায়নি। আমরা সব তথ্য চেয়েছি হাসপাতাল থেকে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। হাসপাতালের গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবির বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগকে ঘটনাটি না জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্যায় করেছে। এটা খুবই স্পর্শকাতর ব্যাপার। আমাদের জানানো উচিত ছিল। আমরা জানতে পারলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। তারা কেন আমাদের কাছে এটা লুকিয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ